শয়তান বিয়েকে নরকতুল্য করতে চায়

এখন আল্লাহ কথা বলবেন আদমের সাথে। তিনি বললেন, وَيٰٓـَٔادَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ -আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী বসবাস করো জান্নাতে, সাময়ীকভাবে। (7:19)

উসকুন। উসকুন এসেছে সুকুন থেকে। যারা একটু একটু তাজউইদ জানেন, সুকুন করলে পুরোপুরি থেমে যেতে হয় নাকি বিরতি নিতে হয়? সুকুনের আক্ষরিক অর্থ বিরতি। শাব্দিকভাবেই এর অর্থ হলো বিরতি।

আর উসকুনের বিপরীত হলো উখলুদ। উখলুদ মানে চিরকাল। উসকুন মানে স্বল্প সময়ের জন্য। আল্লাহ আগেই তো ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছো? তোমরা পৃথিবীতে যাচ্ছো। কিন্তু আদম, তুমি আর তোমার স্ত্রী কয়েকদিন জান্নাতে থেকেই দেখো না। কোথায় যাবার আগে? পৃথিবীতে যাবার আগে। কিন্তু কেনই বা তারা…? যেন আপনি সাধারণ এপার্টমেন্ট পেয়েছেন, কিন্তু তাতে যাবার আগে ফাইভ স্টার হোটেলে এক সপ্তাহ থেকে আসুন। এক্সেকিউটিভ লাউঞ্জে। ফ্রি খাবার সহ।

কেন সেখানে আগে থাকতে হবে? কেন?

কারণ তিনি চাচ্ছিলেন যেন প্রথম মানুষটি দেখে নেয় চিরকালের জন্য তার সন্তানরা কী অর্জন করতে যাচ্ছে। তিনি চাচ্ছিলেন যেন সে জান্নাতের একটি ভালো ধারণা পেয়ে নিজের সন্তানদের সেটার প্রতি উৎসাহ দিতে পারে। আর সেই উৎসাহ চলতেই থাকবে। বুঝতে পারছেন?

তাই তিনি বলছেন, কিছু সময়ের জন্য চাই এখানে থাকো। তুমি আর তোমার স্ত্রী। অন্যদিকে, আদমকে সৃষ্টি করা হলো, কিন্তু স্ত্রীর তো কোন উল্লেখ ছিল না তাই না? স্ত্রীর কোন উল্লেখই ছিল না এতোক্ষণ। হঠাৎ করেই আল্লাহ বলছেন, “তুমি আর তোমার স্ত্রী”। এই স্ত্রী কোত্থেকে এলো?

এটার কারণ বর্ণনায় কিছু মুফাসসিরুনের মন্তব্য আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। তারা বলেন, বিয়ে ছাড়া জান্নাত ঠিক জান্নাত হয় না। প্রথমবার পড়ে খুব হেসেছিলাম। খুব সুন্দর কোথাও বেড়াতে গেলেন। পৃথিবীতে খুব সুন্দর কিছু স্থান আছে। সেই সুন্দর স্থানে গেলেন, একা। নিজের হোটেল রুমে আছেন। ঘুম থেকে উঠে ভাবছেন, “স্থান পরিদর্শনে যাবো, পর্বত দেখবো”। একা! আপনার কি যাবার আর ইচ্ছে হচ্ছে? না।

কারণ আপনি কি? একা। আর আপনি যদি সেখানে গেলেন, একাই। খুবই সুন্দর তুষারাচ্ছাদিত পর্বতের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। জলপ্রপাতও আছে। একটি ছবি তুললেন। কাউকে পাঠিয়ে বললেন, ইশ যদি তুমি থাকতে!

কারণ আনন্দ একা একা উপভোগ করা যায় না। এজন্যই কেউ যখন একা সফর করে, সে তার খাবারের ছবি তুলে রাখে। এমনকি প্লেনের সিট আর সুটক্যেসের ছবিও। কারণ সে চায় তার সাথে অন্য আরেকজনও আনন্দটা উপভোগ করুক। প্লিজ! দয়া করে কেউ তো আমার জন্য খুশি হন! হাহা। তাই না?

আর তারা কারো না কারো মন্তব্যের অপেক্ষা করছে! শুধু পোস্ট করেই ক্ষান্ত হয় না! ছবিটা আমার জীবনের গল্পে সংরক্ষিত থাকলো। না না! অটুকুও যথেষ্ট না! সে চায় আরও কেউ এসে মন্তব্য করুক আর (thumbs up). একটা হার্ট সাইন দিয়ে দেই। পিৎযার সাথে হার্ট সাইনের কি সম্পর্ক? আমি জানিনা! এটাই আপনার চাহিদা!

আল্লাহ বললেন, তুমি আর তোমার স্ত্রী জান্নাতে প্রবেশ করো। আল্লাহ আমাদের বর্ননা করছেন, যে জান্নাতের প্রথম আনন্দটাই হলো প্রীতিময় সাহচর্য। একজন পুরুষ ও নারীর সাহচর্যই হলো জান্নাতের প্রথম আভাস। জান্নাতের প্রথম টুকরো এটাই। اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ 

এখন, এই জিনিসটি আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীতেও দিয়েছেন। আর যেহেতু এই বন্ধন জান্নাতেও থাকবে, আর জান্নাত যেহেতু আনন্দ ব্যতীত আর কিছুই না, শান্তি, আরাম ও সুখ…তাই না? 

আর শয়তান কী চায়? আপনার জন্যে কী চায়? যন্ত্রণা। সে আপনার দুঃখ-কষ্ট চায়। তাই তার আক্রমণ আর ধ্বংসযজ্ঞের প্রথম স্থানটিই হলো বিবাহ। যেন যেটা জান্নাতের স্বাদ হবার কথা ছিল সেটাই জাহান্নামের কষ্ট হয়ে যায়। সে বিবাহের দিকে আসবে সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান থেকে, বাম থেকে। কারণ সে চায় না মানুষ কীসের স্বাদ পাক? জান্নাতের। সে চায় না এটা। সর্বপ্রথম, সে চাবে যেন মানুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেই জড়িয়ে থাকে। আর যদি তারা বিয়ে করেই ফেলে তবে সে সেই বিয়েকে নরকতুল্য করতে চায়। যেভাবেই হোক সে এটা করে।

আল্লাহ আমাদের সুত্র দিচ্ছেন কীভাবে বিবাহিত সম্পর্কের জান্নাতি স্বাদ যেন পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। জানেন এটা? মাত্র তিন ধাপের এক সুত্র। খুব সোজা। একদম কঠিন না। আপনাকে বই লিখতে হবে না। একদম সহজ সরল। তিনি বলেন, وَمِنْ ءَايٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوٰجًا لِّتَسْكُنُوٓا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً

তিনটি জিনিসঃ 

১। তিনি বলেন, শান্তি। তিনি তোমাদের স্ত্রীদের বানিয়েছেন যেন পরস্পরের মাঝে পাও শান্তি, যেন পরস্পরের মাঝে পাও সম্প্রীতি, যেন পরস্পরের মাঝে পাও প্রশান্তি আর উদ্বেগহীনতা। এগুলো প্রথম।

২। এরপর তিনি বললেন, তিনি তোমাদের মধ্যে রেখেছেন তীব্র ভালোবাসা।

৩। এরপর বললেন, দয়া।

তাহলে তিনটি শব্দ একসাথে বলছিঃ শান্তি, ভালোবাসা, দয়া।

কি বললাম মাত্র? শান্তি, ভালোবাসা, দয়া।

অনেক সম্পর্কে যা হয় তা হলো, ভালোবাসা আগে।

– ভালোবাসি তোমাকে! তোমাকে ভালোবাসি!

আর এই ভালোবাসার ফলাফল হিসেবে কী আসে? দয়া। যত্ন।

– কী লাগবে তোমার?! আমি আনছি!

তুমি কত্ত যত্ন করো!

– কারণ ভালোবাসি যে তোমাকে!

ও আচ্ছা! ঠিক! আমিও তোমাকে ভালোবাসি।

ভালোবাসা আর কি? দয়া। লাযিম মালযুম! যখন ভালোবাসবেন, দয়াও দেখাবেন। ভালোবাসা আর দয়া! একসাথেই আসে!

কিন্তু কোনটা নেই এখানে? শান্তি।

আর সময়ের সাথে সাথে কেউ একজন কিছু করলো, কিছু বললো। আর তা কী  নিয়ে গেলো? একটুখানি শান্তি নিয়ে গেলো। একটুখানি।

যেন এমন… আহ! কোন সমস্যা নেই! এখনো তোমাকে ভালোবাসি তো!

প্রচণ্ড ঝগড়া চলে, কারণ কোন শান্তি নেই! আর ঝগড়া শেষে… (কেঁদে কেঁদে) ভালোবাসি! তোমাকেও ভালোবাসি!

এরপর… প্রত্যেকবার ঝগড়ার পর যেহেতু শান্তি নেই, সেই শান্তি একটু বেঁকে যায়, এরপর আরেকটু, এরপর আরেকটু, এরপর আরেকটু। যেন তিন পা ওয়ালা টেবিল। টেবিলের একটা পা যেন ধীরে ধীরে ভেঙ্গে যাচ্ছে।

সেই শান্তি ভেঙ্গে যাচ্ছে বিদ্রুপের কারণে, শক্ত কথা বা মিথ্যা বলার কারণে, কিংবা অপমান বা অসৎ হবার মাধ্যমে। যেভাবেই হোক না কেন… কিছু একটা হচ্ছে যা শান্তি নিয়ে চলে যাচ্ছে। সেই শান্তি যখন চলে যায়, বাকি দুই পা কাঁপা শুরু করে। বাকি দুটো কি? দয়া আর ভালোবাসায় কম্পন শুরু হয়।

একদিন আপনি অনুভব করেন যে তা ভেঙ্গেই গেছে। তখন বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে তোমাকে আর ভালোবাসি না। আমার সেই অনুভুতিটি আর নেই। কোনো অনুভুতি নেই।”

একজন বলে, “তুমি আর আগের মতো যত্ন নাও না।”

– হ্যাঁ আসলেই! জানিনা কেন। আমার আর শান্তির অনুভুতি হয় না।

আমাদের সমগ্র জীবনটাই একটা হাঙ্গামা, আপনারা সবাই জানেন তাই না? জীবনটাই দাঙ্গা হাঙ্গামা। যখন আপনার স্ত্রীই আপনার শান্তি, তখন কথা বলার জন্য আর তর সয় না, যখন দূরে দূরে থাকেন। তার কথা শুনতে ইচ্ছে করে খুব। তাকে দেখতে ইচ্ছে হয়। কারণ তার চেহারা দেখা মানে শুধু ভালোবাসার মানুষকে দেখা না…প্রশান্তি খুঁজে পাওয়াও। 

বাচ্চাদের আপনারা ভালোবাসেন, তারা কিন্তু শান্তি না!

সত্যই বলছি। কিছু মানুষের জন্য তাদের ছুটিটাই হলো অফিসে যাওয়া!

যখন তারা ঘরে আসে তখনই বিসমিল্লাহ…!!! আল্লাহ বাঁচাও!!

তাই না?

আপনার বাচ্চা কখনো যদি বলে, ডিজনি ওয়ার্ল্ডে চলো। আমার কাছে এটা যেন বিচার দিবস মনে করিয়ে দেয়া থেকেও ভয়ঙ্কর! প্রচণ্ড গরমে দাঁড়িয়ে জ্বলছেন… কোনো রাইডের জন্য ঘন্টায় আধ মাইল যায়।

সেখানে সব পিতামাতারা যেন কান্না করছে। তাই না?

ইয়ামুল হাশর… মিকি মাউসের সাথে।

হাহাহা

কথা হলো, আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনার কি হবার কথা? আপনার শান্তি হবার কথা। যখন শান্তি বজায় থাকে, ভালোবাসাও থাকে। যখন ভালোবাসা থাকে, যত্নও থাকে।

এটাই আসলে তিন ভাগে… আসলে উদ্দেশ্যটাই ছিল শান্তি। ভালোবাসা কিন্তু উদ্দেশ্য না। দয়াও উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ ভালোবাসা আর দয়া হলো অনুভূতি। ভালোবাসা আর দয়া কি? অনুভূতি। আর অনুভূতি আসে আর যায়, উঠে আবার নামে।

কিন্তু শান্তি হলো একটি অবস্থার নাম। সাকিনাতে থাকা কিন্তু এক অবস্থার নাম। আর এই অবস্থা যখন বলবত থাকবে, বাকি দুটোও স্থিতিশীল হবে। সেগুলো ঠিক থাকবে। অসাধারণ শিক্ষা এটা!

এমনকি এখানেও আল্লাহ বলছেন, “উসকুন”! সাকিনাও একই শব্দ। اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ (2:35)

– নোমান আলী খান 

শয়তান বিয়েকে নরকতুল্য করতে চায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to top
Generated by Feedzy